হাসিবুরের সাবলীল নূর
নুরনব্বী
সিনিয়র মাদ্রাসা। যার থেকে দু’পা এগোলেই হুমাইপুর বাসস্ট্যান্ড। যেখানে কোনও
প্রতীক্ষা নেই। আর তার ছাউনির টিনের চাল থেকে জল পড়ে যাচ্ছে। টুপটুপ! টুপটুপ! জল
জমতে জমতে মাটিতে একটা শ্যাওলার স্তর পড়ে গেছে। হাসিবুর কেন তাকিয়ে আছে সে বুঝতে
পারেনা নিজেই। আর বাসস্ট্যান্ডে পড়ে থাকা মদের বোতলে নাক নিয়ে যেতেই তার গা গুলিয়ে
উঠলো। হলুদ বমির মধ্যে দেখতে পেল নিজের মুখ। আর সেই শ্যাওলার গন্ধে মনে পড়ে যাচ্ছে
তার ঢ্যাড়া পিটানো খবরের কাগজ, কারখানা ও জনগণের মনকে নিয়ন্ত্রণ করা নিউজগুলোর
ফাঁদের কথা।
***
একটা ঘোলা
চোখের মণির দিকে চেয়ে সে নাম রেখেছে চোখটির নূর। যে এই পৃথিবীর বাইরের কেউ নয়।
ভূলুন্ঠিতা চোখটির দিকে তাকিয়ে সে প্রমিস করে। চুমু খায়। নিজের ব্যক্তিগত ছুরি
কাঁচি দিয়ে সে চেঁছে ফেলতে চায় নুরের গ্লুকোমা। এই ভাবে পথ খুঁজতে খুঁজতে সে নেমে
পড়ে। আর বলতে থাকে – পৃথিবীতে আর আখেরাতে আমাদের জনকল্যাণ লিখে দাও। আমরা তোমার
দিকে প্রত্যাবর্তন করছি।
এদিকে তার দোয়া কেটে গিয়ে মনে পড়তে শুরু
করে কারখানার সুতোর রিম কাটার কথা বা পেঁচিয়ে লাথি খাওয়ার কথা। তখন সুতোর
তন্তুগুলো তার মাথায় জড়িয়ে হুঁশ-টুশ হারিয়ে যায়। তখনই আলো আসে। আলো আসে স্পষ্ট
ইঙ্গিতের। তাৎক্ষণিকভাবে নাকে ঠুসে যেতে থাকে পেঁয়াজ রসুন মাখানো নূর। সেই নূর যে
বলতে চেয়েছিল-
-
আপনি কি নীতি মান্য করেন?
-
আপনি কি আমাদের নীতি বুঝতে চেয়েছেন?
এসব
শুনে হাসিবুর ক্যালাচোদা বনে যায়। ওর ধর্তব্যের মধ্যে একটা কথাই ঘুরপাক খেতে থাকে।
আর নিজের মনে মনে বলতে থাকে আমি শান্তিপ্রিয় চোদনা, কোনো নীতিকে সমর্থন করলেও তার
একটি বীজ আমি বাইরে ছড়াতে দেব না। বাইরে ছড়িয়ে পড়লেই পুরো একটা ঢ্যামনার চারাগাছ
হবে। বনসাই হবে। তখন আমি কীভাবে সমর্থন করবো?
***
এসব ভেবে
নিয়ে সে গ্লুকোমা আবৃত নূরকে বলে- পক্ষালম্বন একটা কার্বাঙ্কল। যার নালি অনেক আর
যন্ত্রণা শতগুণ। যা চেঁছে পুঁজ-রক্ত বের করতে হয় নতুন এক বা একাধিক ফলিকেলকে
গর্ভিণী করার আশায়। তারপরেও হাল্কা নাড়া দিন। চুলকান। দেখবেন
ভিতরটা টাটিয়ে ওঠে। সবাই সব্বার মতন মাখন মেরে দেয়।
নূর
তাকে বলে এসব প্রান্তীয় ও বিক্ষিপ্ত।
হাসিবুর
মনে মনে বলে আমার বালের মায় কাঁদে। এসব বালের বিক্ষিপ্ত ও প্রান্তীয়! কিন্তু হাত
পায়ে খিঁচ উঠতেই নিজেকে সামলে নিয়ে সে
চেঁচিয়ে ওঠে না... না... আসলে সিনড্রোম। এরপর ঘোলাটে নূরকে প্রশ্ন করে ধরুন একটা
শিশু হাত পা ছুঁড়ে খেলছে তাকে কী বলবেন?
এই
প্রশ্ন শুনে নুরের ডোনেটর না পাওয়া কর্ণিয়ায় ঝুলে পড়ে একটা হাসি আর বুরের লজিক।
এবং এককথায় বলে ওটাই একমাত্র ক্রীড়ার কৌশল, বাকিটা মেশিনের ঘড়্ ঘড়্ আওয়াজ। নূর
কোথায় হারিয়ে যায় এরপর। হাসিবুর তার নিজের চোখটাকে এলিয়ে দেয় মাদ্রাসার পাশে মোষের
খাটালটার দিকে। একদৃষ্টে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকার পর সে বিড়বিড় করে বললো- বাস্তবসত্তা,
আকার, অনুকায় পরিস্থিতি। তারপর নীচের দিকে তাকিয়ে একটা বিড়ির পোঁদ দেখতে পেল এবং
সেটাকে পিষতে পিষতে বললো ‘সন্ত্রাস’। তৎক্ষণাৎ তার স্টিমুলাস কার্যকর হয়ে উঠলো।
হেলথ্ সেন্টারের মাঠ থেকে সটান একটা ৫ নম্বর সাইজের ফুটবল ধড়াম্ করে লাগলো মাথায়,
সংবিৎ ফিরে পেতেই সে দেখল সহজপাঠ কেজি স্কুলের আকাশ আর খাটো পাজামা পরা মাদ্রাসার
মিজানুর খেলছিল। দুজনেরই পিঠে সাদা গজের পুরু ব্যান্ডেজ। সেই নালি গেঁড়িয়ে যাওয়া
বীভৎস কার্বাঙ্কল চাপা দেওয়া রয়েছে ব্যান্ডেজে।
***
মিলি
ইলেকট্রিকের দোকান অবধি নুরের ঘোলা চোখে প্রশ্নের ব্যারাম থামতেই হাসিবুর ভাবলো এত
কঠিন প্রশ্ন তার নয়, এসব ওই থলথলে গ্লুকোমা আচ্ছাদিত চোখেরই পাগলামি বা নৈতিক
বিরুদ্ধতা। সে কানাচোদা হলেও বলবান। এসব উথালপাথাল ভাববার পর তার একটা তেড়ে
পেচ্ছাপ এলো। আসলে পেচ্ছাপ একধরণের সংখ্যাতাত্ত্বিক ত্রুটি। যখন কিছু মেলে না। যখন
সবকিছু স্বচ্ছ বা ধোয়া চোখে হরবোলা হয়ে যায় তখন পেচ্ছাপ ত্রুটি ছাড়া আর কিইবা হতে
পারে।
সুরুৎ সুরুৎ
করে শব্দ হচ্ছে ! সারদাপল্লী লাগোয়া মিনি আজাদ সংঘের পাশের কালভার্টটায়। হাসিবুরের
পেচ্ছাপ চাটছে দুটো কুকুর। গেঁজলা ওঠা পেচ্ছাপ। মুখ ঘুরিয়ে খানিকটা দেখে নিয়ে
হাসিবুর তাজ হোটেল থেকে যবের রুটি আর হাফ প্লেট ভুনা নিয়ে ব্যাগে পুরে স্যাট করে
চেনটা টেনে দেয়। ওমনি খিক খিক করে হাসতে হাসতে গ্লুকোমা জড়ানো নূর বলে ওঠে-
ঘড়িটা
দেখেছেন?
হাসিবুরের
ঘুম ভেঙে যায়। লেপ সরিয়ে সে সাইকেলে প্যাডেল করার ভঙ্গিমায় পা নাড়তে থাকে। চারপাশ
থেকে চল্লিশ ওয়াটের বাল্বের ঝিমানো আলোয় সে অনুভব করে ‘কঠোর মানসিক হাসপাতাল’ আর
সুতোর কারখানার মেশিনগুলো তাকে বলছে মালিকের কাছে হেরে যাওয়া চুতিয়া, মাঙমারানির
ছল।
( এই গল্পে কোনও গুজব নেই)
খুবই ভালো লাগলো বন্ধু
ReplyDeleteThis comment has been removed by the author.
Deleteনা, সত্যিই এই গল্পে কোনও গুজব নেই। থাকতেই পারে না।
ReplyDeleteহয়ত, তোমার মনে হয়েছে - এর বেশি কিছু বলার নেই। আমারও মাঝে মাঝে মনে হয় এমন। তারপর আর লিখি না।
তবে তুমি যে সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছ, তাদের প্রতি সুবিচার করোনি। একটা ইন্টারসেপ্ট থেকে আর একটা ইন্টার্সেপ্ট আছে... আরও কিছু করতে পারো এমন। এই শৈলী, এই প্রয়োগ নিয়ে। আরও ওয়েল ডিফাইন্ড।
চেষ্টা করবো করার জয়দীপদা। এই যে বললে এতে একটা সুবিধা হল আমি পরবর্তীতে আরও নার্চার করতে পারবো।
Deleteভাল লাগলো গল্পটা।
ReplyDelete* অর্পিতা
Deleteআচ্ছা।
Deleteপ্রায় একাধিক বিকল্প বর্তমানকে সমান্তরাল আকার দেওয়ার কলমটিও হওয়া চাই তীব্রভাবে কন্ট্রোলড ও বিভেদপটু, যেমনটি পেলাম। অদ্ভুত গল্প, ততোধিক তীক্ষ্ণ এর নাব্যতা। অঙ্ক ও অঙ্কপূর্বক একটা সর্পিল রাজনীতি পুরো লেখাটা ডিক্টেট করছে যদি ভেবে নিই, তার লেখার প্রতি অনুযোগ একটা আসবেই। সেটা ওই মানসিক হাসপাতালের উল্লেখ। হয়তো কোন প্রসঙ্গনির্দেশ রয়েছে কোথাও, যোগ্য রেফারেন্স ঘাঁটতে ঘাঁটতে কোনদিন চোখে পড়ে যাবে। ডিটেলকে এত সুপটুভাবে পরাবাস্তবের আধারে ধরা যায় তা প্রথম না হলেও অনন্যভাবে দেখলাম। অভিনন্দন।
ReplyDeleteধন্যবাদ। এই কমেন্টটাও পিপাসা বাড়িয়ে দিল। :)
Delete